প্র নাগরিক ও দ্বি নাগরিক

প্রঃ না - আমাদের মহারাণী লাবন্য লতিকার কি দয়ার শরীর-

 

দ্বিঃ না - তুমি কি করে জানলে,

 

প্রঃ না - আরে আগের মহারাজ , মহারাজ বিক্রমশালী, কিরকম অত্যাচারী রাজা ছিলেন বল- তাকে পরাস্ত করে যখন আমাদের মহারাণী যখন সিংহাসনে বসলেন, তখন যদি রানীমা চাইতেন বিক্রমশালী কে প্রাণে মেরে দিতে পারতেন, কিন্তু না প্রাণে মারেন নি-

 

দ্বিঃ না - তাহলে-

 

প্রঃ না - মহারাজ গরম শিশে বিক্রমশালীর গলায় ঢেলে দিয়ে শুধু মুখ বন্ধ করে দিয়েছেন হেঃ হেঃ হেঃ।      

 

দ্বিঃ না _ অ্যাঃ

 

প্রঃ না - আরে হ্যাঁ- তা ছাড়া আর বলছি কি! শুধু তাই নাকি- রাজবাড়িরই একটা আলিশান কক্ষে স্বয়ং মহারাজের নিজের তত্ত্বাবধানে রাখা হয়েছে শুনেছি। তবে সবই শোনা কথা- আমি তো আর রাজবাড়ির ভেতরে ঢুকে দেখিনি-

 

দ্বিঃ না - হ্যাঁ ঠিক ঠিক ঠিক।

 

প্রঃ না - অনেক ভেল্কি দেখিয়ে মহারাজ তবে সিংহাসনে বসেছেন-

 

দ্বিঃ না - ভেল্কি! ভেল্কি কেন?

 

প্রঃ না - যেমন কথা বলো তুমি, আরে লাঠি খেলতে গেলে লাঠি চালানো জানতে হয় তো?

 

দ্বিঃ না - হ্যাঁ তা তো জানতে হয়।

 

প্রঃ না - জমিতে বীজ বুইয়ে, সেই বিজের দ্যাখ ভাল করে সোনার ফসল ফলাতে গেলে সেটাও তো জানতে হয়?

     আবার নাপিত যে চুল দাড়ি কামায়- তুমি আমি পারবো ভায়া? আরে যার যা কাজ, শ্মশানের ডোম ই বলো আর পুরোহিতের অং বং চং, সবাইকেই তো সবার নিজের কাজটা জানতে হবে ভায়া-

 

দ্বিঃ না - হ্যাঁ এ তুমি খুব সত্যি কথা বলেছো- তবে মাহারাজ-

 

প্রঃ না  বুঝলে না তো?

 

দ্বিঃ না - না ঠিক-

 

প্রঃ না - ঠিক তেমনি- মহারাজ হতে গেলে ভেল্কি জানতে হয়... আরে রাজা হতে গেলে ভেল্কি টেল্কি জানতে হয়।

 

দ্বিঃ না - অ্যাঃ!

 

প্রঃ না - বোঝোনি নাকি? আবার বোঝাবো?

 

দ্বিঃ না - বুঝেছি বুঝেছি, সব কিছু হতে গেলেই সে বিষয় সম্বন্ধে কিছু জানতে হয়, তেমনি মহারাজ হতে গেলে ভেল্কি জানতে হয়।

 

প্রঃ না  এই তো, এই তো একদম ঠিক বুঝেছ। যাক শোনো রাজবারিতে ঢোকবার একটা সুযোগ এসেছে ভায়া। মহারাজ প্রতাপাদিত্য সিংহাসনে বসবার পর তার শিল্পসত্তার জাগরণ হয়েছে। তাই দেশের সমস্ত প্রতিভাবান সঙ্গীতজ্ঞদের জন্য একটা প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা করেছেন। শুনেছি পুরস্কার খুবই মূল্যবান। একবার যে পাবে তাকে আর কোনদিন কোনও কাজ করতে হবেনা, সারা জীবন বসে খাবে হে।

 

দ্বিঃ না - সেকি! কি বলো কি!

 

প্রঃ না - তা ছাড়া আর বলছি কি? দেশের বিভিন্ন রাজ্য থেকে নামী, বেনামী কত শিল্পী আজ সকাল থেকেই রাজবাড়ি তে এসে হাজির, রাজবাড়ির লাগোয়া বিশ্রামাগারে তাদের বিশ্রামের ব্যবস্থা হয়েছে। আমীর ওমরাহরা অনুষ্ঠান দেখবার জন্য এতক্ষণে এসেও পৌঁছেছেন। আরে চলো চলো এত বড় অনুষ্ঠান চোখে দেখবার সুযোগ হাতছারা করে কি লাভ।

 

দ্বিঃ না - ধুর! আমরা কি ঢুকতে পারবো? আমরা না রাজসভার লোক, না আমীর ওমরাহ, না আমরা গান গাইতে পারি-

 

প্রঃ না - তা ঠিক বলেছ, তবে আমি থাকতে ঢুকতে পারবো না? এটা কি কখনো হয় নাকি?এই যে এই দেখো (পকেট থেকে দুটো কাগজের টুকরো বার করে দেখালো) দুখানি প্রবেশ পত্র ঠিক আমি ভেতরে একজন কে হাত করে নিয়ে বের করে এনেছি। হে হে হে।

 

দ্বিঃ না - না বাবা না, আমি যাচ্ছি নে, মহারাজ যদি জানতে পারে-

 

প্রঃ না - আরে জানবে না ভায়া, আমি অত কাঁচা কাজ করিনে বাপু- আর মহারাজের তো দয়ার শরীর-

 

দ্বিঃ না - না , না, যতই বলো ভায়া, মহারাজের দয়ার শরীর- যদি জানতে পেরে গরম শিশে ঢেলে দেয়- ওরে বাবা কিছুতেই না- এই আমি বসছি, আমি যাচ্ছি নে-

 

প্রঃ না  ধুর !

          ( দ্বিঃ নাগরিক বসে পরে, প্রঃ নাগরিক ও মাথায় হাত দিয়ে বসে পরে, দ্বিঃ নাগরিক বসে এদিক ওদিক তাকাতে থাকে, হটাত দেখতে পায়, গাছের পিছন থেকে কে যেন উঁকি মারছে)

 

 

দ্বিঃ না - এই তুমি কে হে? চুপি চুপি আমাদের কথা শুনছো কেন? বেরিয়ে আসো এদিকে বলছি।

 

প্রঃ ন  অ্যাঁই অ্যাঁই তুই কে রে? (তেরে যায়) আয় এদিকে আয়।

                                  ( চরণ দাস কাঁচুমাচু হয়ে বেরিয়ে আসে)

 

দ্বিঃ না  আহা ও বোধহয় ভয় পেয়েছে-

 

প্রঃ ন - চুপি চুপি আমাদের কথা শুনছিলি কেনো? (চোখ যায় বাদ্য যন্ত্রটার ওপর)

     ও বাবা এটা আবার কি?

 

দ্বিঃ না  (এগিয়ে যায়) এ দিখি বাদ্য যন্ত্র? এই তুমি কি গান করো নাকি? নাকি শুধু এই বাদ্য টা বাজাও!

 

প্রঃ না  এই এটা চুরি করেছিস?

 

দ্বিঃ না  সেকি! তুমি চোর-

 

প্রঃ না  তা ছাড়া কি? কার কাছ থেকে চুরি করে এনেছিস বল---

 

চরণ  - (কাঁদো কাঁদো হয়ে) না না আমি চোর নই, চোর নই- আমি গান গাই গো- এ বাদ্যি আমার, আমার ঠাকুরদার বাদ্যি, আমাদের পারিবারিক জিনিস।

 

প্রঃ না  (ভেঙিয়ে) এ বাদ্যি আমার- ঠাকুরদার বাদ্যি- আমাদের পারিবারিক জিনিস চোপ- চল তোকে কোতয়ালে নিয়ে যাই  চল (হাত ধরে টানতে থাকে চরণ কাঁদতে কাঁদতে বলতে থাকে)

 

চরণ - এ আমার ঠাকুরদার বাদ্যি গো- ঠাকুরদার বাদ্যি 

 

দ্বিঃ না  আহা! করো কি- করো কি- বলছে যখন-

 

প্রঃ না  ( হাত ছেড়ে) প্রমান দিতে পারবি?

 

দ্বিঃ না  হ্যাঁ গো প্রমান দিতে পারবে?

 

চরণ - (মাথা চুলকিয়ে) হ্যাঁ হ্যাঁ প্রমান দিতে পারব।  আমার নাম চরণ দাস গায়েন- বাবার নাম ঈশ্বর দাস গায়েন আর ঠাকুরদার নাম ভগবান দাস গায়েন- দেখো ভাই এই বাদ্যিতে তাঁর নামই লেখা আছে। এই দেখো আমার গলার মাদুলি, আইটাতে বাবার নাম, আইটাতে আমার ঠাকুরদার নাম, আর আইটাতে আমার নাম-

 

দ্বিঃ না  আচ্ছা ঠিকাছে ঠিকাছে-

 

প্রঃ না  বাআআবা! এতগুলি মাদুলি, তোমার ছেলে কি চারটে মাদুলি নিয়ে ঘুরবে, তাঁর ছেলে পাঁচটা, তাঁর ছেলে ছয়টা যতসব- হ্যেঃ পাগলের কারবার।

 

চরণ  - আসলে এইটা আমার একটা শখ বলতে পারো গো- আমি আসলে আমার পূর্ব পুরুষদের সংস্কৃতি- ঐতিহ্য এগুলি কে সাথে নিয়ে একটু চলতে চাই, রোজ সকাল থেকে সন্ধ্যে মানুষের কেমন বদল, যেমন দিনের আলো থেকে রাতের অন্ধকার, বসন্তের আদর থেকে গরমের ঝলসানো, আবার বর্ষার উজান থেকে শীতের শুষ্কতা- শুধু পরিবর্তন! আমি সেই পরিবর্তন কে ভয় পাই, তাই 

 

প্রঃ না  আঃ  হয়েছে হয়েছে 

 

দ্বিঃ না  আচ্ছা ঠিকাছে ঠিকাছে- তা তুমি কি গান গাও ভাই? তা একটু গান শোনাও না-

 

চরণ - কিন্তু আমার গলায় যে মা সরস্বতী অন্যভাবে বসেছে ভাই-

 

দ্বি না - কি ভাবে?

 

চরণ  - সে তোমরা আমার গান শুনলেই বুঝবে-

 

দ্বি না - তা শোনাও দেখি- তোমার বাদ্যি তে লাগাও সুর-

 

প্রঃ না - আঃ! আমাদের তোমার গান শোনবার ইচ্ছা নেই  এই চলো তো- তোমার রাজবাড়িতে যাবার ইচ্ছা না থাকলে তুমি বরং ওর গানই শোনো আমি একাই যাচ্ছি। (প্রস্থানোদ্যত)

 

 

দ্বিঃ না - তুমি তো গান করো ভাই, রাজবাড়ি যাবে? প্রতিযোগিতা হচ্ছে। জিতলে অনেক পুরস্কার পাবে।

          (প্রঃ নাগরিক কথা শুনে দাঁড়িয়ে পরে)

 

চরণ  - আমি! আমি যাব প্রতিযোগিতায়? অনেক পুরষ্কার?

          (চরণ ভাবতে থাকে- বিড়বিড় করে পুরষ্কার অনেক পুরষ্কার- বৌ তাহলে- অনেক পুরষ্কার)

 

প্রঃ না - ধুর- ও পাবে পুরষ্কার! একটা যন্ত্র নিয়ে বসে আছে ব্যাটা ভিখিরি-

 

দ্বিঃ না  ওকে রাজবাড়িতে নিয়ে গেলে কেমন হয়? এই তো বললে প্রতিযোগীদের এলাহি ব্যবস্থা- ওর গানের সাকরেত হয়ে আমরাও ঢুকতে পারবো, রাজসীয় বিশ্রামাগারে থাকতেও পারবো, অনুষ্ঠান ও দেখতে পাবো-

 

প্রঃ না  হুম! এটা বেশ বলেছ তো ভায়া। তুমি তো ঐ প্রবেশ পত্রে রাজবাড়িতে যাবেনা, আর এটা ও ঠিক ধরা পরবার একটা ভয় ও আছে- কিন্তু এই ব্যাটা কে প্রতিযোগী বানিয়ে নিয়ে গেলে- হুররর রে কেল্লা ফতে-

 

দ্বিঃ না - তাঁর ওপর ও যদি জিতে পুরষ্কার পায়- তাহলে তো বেচারার ও একটা হিল্লে হয়ে যাবে- বেচারা খুব দুঃখী-

 

প্রঃ না - পুরষ্কার না ছাই- ও পাবে পুরষ্কার! ব্যাটা ভিখিরি! তুমি কি যে  হেঃ হেঃ হেঃ ( একটু ভেবে) তবে যদি পেয়েও যায়, তাহলেও পুরটা হাতিয়ে নেবো! দারুন বুদ্ধি!

 

দ্বিঃ না  আহা! তা কেনো! আহা!

 

প্রঃ ন - ( চরণ দাসের দিকে এগিয়ে আসে) অ্যাঁই চল আমাদের সাথে চল-

 

চরণ - কোথায়! কোথায় যাবো!

 

দ্বিঃ না - রাজবাড়ী!

 

চরণ  - রাজবাড়ী!

 

( প্রথম নাগরিক এবং দ্বিতীয় নাগরিক একসাথে হ্যাঁ রাজবাড়ী। লাইট কাট)

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

“যদিদং হৃদয়ং মম, তদস্তু হৃদয়ং তব"

আমি