সুকুমারী দত্ত

 পর্ব ২

সুকুমারী দত্ত 

১৮৭৩ সাল  বাংলা  নাটকের ইতিহাসে নতুন অধ্যায়ের সংযোজন । এই বছর ই বাংলা নাটকে বেঙ্গল থিয়েটার পাকাপাকি ভাবে অভিনেত্রী নিয়োগ  করে ।   সাধারণ রঙ্গালয়ের জন্য প্রথম চারজন অভিনেত্রী গ্রহণ করে ।  জগত্তারিনী, গোলাপ সুন্দরী, এলোকেশী এবং শ্যামা, তার মধ্যে উল্খেযোগ্য ছিলেন গোলাপ সুন্দরী । গোলাপ সুন্দরী র প্রথম মঞ্চাবতরণ ১৮৭৩এর ২৩শে আগস্ট বেঙ্গল থিয়েটারের দ্বিতীয় অভিনয়ে  "শর্মিষ্ঠা " নাটকে শর্মিষ্ঠার চরিত্রে  । বেঙ্গল থিয়েটারের উদ্বোধনী অভিনয়  ১৬ই আগস্ট  কে করেছিলেন সেই বিষয়ে তেমন করে কোথাও উল্লিখিত নেই। বেঙ্গল থিয়েটারের হয়ে গোলাপ সুন্দরী বেশ কিছু অভিনয় করেন। তার মধ্যে উল্খেযোগ্য বিমলা (নাটক দুর্গেশ নন্দিনী), মলিনা (অশ্রুমতি), ঐলবিলা(নাটক পুরু বিক্রম), এছাড়া ও নাটক মায়াকানন, কৃষ্ণ কুমারী, রত্নাবলী, সপ্নাধন, একেই কি বলে সভ্যতা প্রভৃতি নাটকে অভিনয় করেন।

১৮৭৪ এর শেষ দিকে গোলাপ সুন্দরী গ্রেট ন্যাশনাল এ যোগ দেন । বেঙ্গল থিয়েটারে তার গুরু ছিলেন শরৎচন্দ্র ঘোষ এবং বিহারীলাল চট্টোপাধ্যায়। গ্রেট ন্যাশনালে সাহচর্যে  এলেন অর্ধেন্দু শেখর মুস্তাফির, নতুন শিক্ষায় আরো সমৃদ্ধ হয়ে  অল্প সময়ের মধ্যেই নিজ চেষ্টা আর একাগ্রতার দ্বারা সে যুগের  শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হয়ে উঠলেন। গ্রেট ন্যাশনালে উপেন্দ্রনাথ দাসের "শরৎ সরোজিনী" নাটকে নায়ক শরতের বোন সুকুমারী র ভূমিকায় এতই জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন, তখন থেকেই লোক মুখে গোলাপ সুন্দরী সুকুমারী নামে পরিচিত হতে থাকেন। পরবর্তী সময়ে উপেন্দ্রনাথ দাসের তত্ত্বাবধানে গ্রেট ন্যাশনালের অভিনেতা গোষ্ঠ বিহারীলাল দত্তের সাথে বিবাহ দেন তাকে সামান্য বারাঙ্গনা থেকে সামাজিক ভাবে প্রতিষ্ঠা দেবার জন্য, বিবাহের পর থেকেই গোলাপ সুন্দরী  নিজের নাম সুকুমারী দত্ত রাখেন।  কিন্তু সে বিবাহ জীবন সুখের হয় নি। বারাঙ্গনার সাথে  বিবাহ, অসামাজিক বিবাহ এই সমস্ত  বিপরীতমুখী সমালোচনার হাত থেকে নিজেকে মুক্ত করতে সুকুমারী কে পরিত্যাগ করে গোষ্ঠ বিহারী বিলেত চলে যান। কন্যা সন্তান কে নিয়ে একা সুকুমারী দেবী খুব অসুবিধায় পড়েন। কিন্তু তিনি  ভেঙে না পড়ে,  স্বামী পরিত্যাগ করবার অল্প  কিছুদিনের মধ্যেই "অপূর্ব সতী" নামে একটি নাটক রচনা করেন ১৮৭৫ এবং ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল থিয়েটারে অভিনীত হয়। অনেকের মতে সুকুমারী দত্ত নিজে নাটক টি রচনা  করেন নি, কারন এই বইয়ের নামপত্রে দুজনের নাম আছে,  এক আশুতোষ দাস, এবং সুকুমারী দত্ত,  অনেকে  মনে করেন উপেন্দ্রনাথ দাসই ছদ্মনামে সুকুমারী দত্তের জীবনী নিয়ে  বইটি লিখেছিলেন। পার্থক্য শুধু এই ছিলো স্বামী পরিত্যক্তা হয়ে সুকুমারী দেবী আত্মহত্যা করেননি । নাটকে আত্মহত্যা করেছেন নায়িকা যা সুকুমারী দেবীর জীবনী নিয়ে লেখা হয়। এ তথ্য কতটা সত্য স্পষ্ট করে বোঝা যায় না। এই তথ্যের মধ্যে মিশে আছে মানুষের সাধারণ ধারণা, যে ধারণায় মেনে নেওয়া যায় না সামান্য বারাঙ্গনার জীবন থেকে উঠে  আসা অশিক্ষিত কোনো মহিলা  কোনো ব্ই রচনা করতে  পারেন, কিন্তু এ কথা সম্পূর্ণ সত্য নয় উপেন্দ্রনাথ দাসের শিক্ষা সহযোগিতা কে যেমন অস্বীকার করা যায় না তেমনিভাবেই অস্বীকার করা যায় না গোলাপ সুন্দরীর সুকুমারী হয়ে ওঠবার প্রচেষ্টা কে । বিভিন্ন প্রতিকূলতার মধ্যেও সেই সময়ে সুকুমারী দেবী নিজ নাট্য দল গঠন করেন,  নাম দেন হিন্দু ফিমেল থিয়েটার। মহিলাদের নিয়ে গঠিত এই দলে স্তম্ভ সম্ভার নামে একটি  নাটক অভিনয় করান।১৮৯৮ সালে শেষ বার তাকে  মিনার্ভায় অভিনয় করতে  দেখা  যায় । 

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

“যদিদং হৃদয়ং মম, তদস্তু হৃদয়ং তব"

আমি